Saturday, December 30, 2023
BANGLA TRANSLATION OF TAFSIR IBN KASIR [1 TO 18 PARTS]
কোন তাফসীর পড়ব?
==================
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। প্রায়শই লক্ষ্য করি অনেকেই প্রশ্ন করেন বা পরামর্শ চান "আমি কোন তাফসীর পড়ব"। প্রশ্নকারীর নেক নিয়্যাতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরাও বিভিন্ন তাফসীরের পরামর্শ দিয়ে থাকি। অনেকে আবার প্রচলিত কিছু তাফসীর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিয়ে তার থেকে দুরে থাকতেও বলি। অবশ্যই আমাদের বিশ্বাস করতে হবে পবিত্র কুরআনুল কারীমের অনুবাদ, ব্যাখ্যা যতই সুনিপূণ হোক না কেন তা আল্লাহর অমীয় বাণীর মর্মার্থ পুরোপুরি আদায়ে সমর্থ নয়। কেননা অনুবাদ হলো অনুবাদকের প্রজ্ঞা আর মেধাশক্তি দিয়ে কুরআনকে বুঝার প্রয়াস মাত্র। যার মধ্যে মানবীয় ভুল-ত্রুটি, অপূর্ণতা থাকা বিচিত্র কিছু নয়। পাঠক হিসেবে আপনি যদি একজন ডাক্তার হোন তাহলে আপনার কাছে কুরআন মনে হবে একটি উত্তম চিকিৎসা শাস্ত্র। ইকামাতে দ্বীনের একজন সৈনিকের কাছে মনে হবে এই কিতাব নিরংকুশ ভাবে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথাই বলছে। একজন নাবিকের কাছে মনে হবে এই কিতাবতো এক বিস্ময়কর সমুদ্র বিজ্ঞান। একজন সমরবিদের কাছে মনে হবে এই কিতাব পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এবং মানবিক সমরনীতির কথাই বলছে। একজন দার্শনিকের কাছে এই কুরআনকে মনে হবে এক শ্রেষ্ঠ দর্শন শাস্ত্র। একজন মনোবিজ্ঞানী যখন এই গ্রন্থ পড়বে তার কাছে মনে হবে এ এক নান্দনিক মনোবিজ্ঞান শুধু নয় বরং মনোরোগের চিকিৎসার এক কালজয়ী প্রেসক্রিপশন। এভাবে প্রত্যেক পাঠক তার আজন্মলব্ধ জ্ঞানের সমাহার এই কিতাবের মাঝে দেখতে পাবে। অনুরূপভাবে যিনি তাফসীর করেন তার তাফসীরের ক্ষেত্রেও তার প্রফেশন, আত্ম-অনুভূতির প্রভাব পড়বে। একজন বিজ্ঞান মনস্ক কিংবা ইকামাতে দ্বীনের সিপাহসালার অথবা দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ (চেতনায় শুধুই আখেরাত) ব্যাক্তির তাফসীর বা কুরআনের ব্যাখ্যা কখনোই এক রকম হবেনা। এমনকি প্রতিটি শব্দের অর্থ করার ক্ষেত্রেও শব্দ চয়নে ভিন্নতা আছে। যেমন "রব" বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। এর অর্থ একজন "প্রভু", কেউবা
"প্রতিপালক" আবার কেউ "রব" অবিকল রেখেছেন।
এক্ষেত্রে কোন অর্থকেই একমাত্র বলার সুযোগ নেই।
আল - কুরআন আল্লাহর বানী। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তার বানীর ব্যাখ্যা সম্পর্কে নিজেই বলছেন, "পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে, সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয়, তবুও তাঁর বাক্যাবলী লিখে শেষ করা যাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।" সুরা লোকমান, আয়াত নং ২৭। অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন "বলুন, আমার পালনকর্তার কথা লেখার জন্যে যদি সমুদ্রের পানি কালি হয়, তবে আমার পালনকর্তার কথা, শেষ হওয়ার আগেই সে সমুদ্র নিঃশেষিত হয়ে যাবে। সাহায্যার্থে অনুরূপ আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও। সুরা কাহাফ, আয়াত নং ১০৯। আমরা জানি পৃথিবীর চারভাগের তিন ভাগ পানি। সমুদ্রের গভীরতম খাদ মারিয়া ট্রেন্সে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গকে যদি দাবিয়ে দেয়া হয় তবে তা ৮০০০ ফিট গভীরে হারিয়ে যাবে। এরকম সাত সমুদ্র কালিও আল্লাহর বানী এবং তার ব্যাখ্যা লিখার জন্য যথেষ্ট নয়।
আমি এক সময় প্রবাসে (সৌদিআরব) থাকতে বিভিন্ন বাংলাদেশীদের অনুষ্ঠানে ইসলামি ক্যাসেট, সিডি বিক্রি করতাম। সব ক্রেতার একটা কমন প্রশ্ন "নতুন কি (সংগীত, নাটক, ওয়াজ) আছে? আমি একটা সিডি হাতে নিয়ে বলতাম এই নাটকটা কি দেখেছেন অথবা এই ওয়াজ বা সংগীতটা কি শুনেছেন। উত্তরে " না" বললেই বলতাম এটাই আপনার জন্য নতুন। প্রিয় ভাই/বোন যে তাফসীরটাই হাতের নাগালে পান পড়া শুরু করুন। কিয়ামত পর্যন্ত শত-সহস্র তাফসীর লিখা হবে। কোনটাই আল্লাহর কিতাবের ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট কিংবা একমাত্র হবেনা। অতএব পড়তে থাকুন ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণনা ফরজ-ওয়াজিব- সুন্নাহ বুঝে, শির্ক-বিদাআত - হারাম-হালাল চিনে নিজের ঈমান-আক্বীদাহ ঠিক রেখে চলতে শিখেন। কেননা কমপক্ষে এতটুকু জ্ঞান অর্জন আল্লাহ আপনার উপর ফরজ (বাধ্যতামূলক) করেছেন। তবুও অনেক তাফসীর গ্রন্থ থেকে আমি বাংলা ভাষায় অনুদিত কিছু তাফসীরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরলামঃ
তাফসীরে ইবনে কাসিরঃ
ইবনে কাসির (১৩০১–১৩৭৩) ছিলেন একজন মুহাদ্দিস, ফকিহ, মুফাসসির ও ইতিহাসবিদ। তার পুরো নাম ইসমাঈল ইবন উমর ইবন কাসীর ইবন দূ ইবন কাসীর ইবন দিরা আল-কুরায়শী। তার রচিত তাফসিরের জন্য তিনি অধিক প্রসিদ্ধ। এই তাফসিরকে পরবর্তী সকল তাফসীর গ্রন্থের প্রামাণ্য হিসেবে ধরা হয়। এ ছাড়াও ইবনে কাসির "আল-বিদ্যায়া ওয়ানা নিহায়্যা", "কিতাব আল-জামি", ‘’বিচার দিবসের পূর্বের চিহ্ন" প্রভৃতি গ্রন্থের জন্যও প্রসিদ্ধ হয়ে থাকবেন।
তাফসির ফি জিলালিল কুরআনঃ
যার বাংলা অর্থ কুরআনের ছায়াতলে। মুল তাফসির কারক সাইয়েদ কুতুব শহীদ। মুল আরবি ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন হাফেজ মনির উদ্দিন আহমদ। সাইয়েদ কুতুব শহীদ (১৯০৬ - ২৫ আগস্ট ১৯৬৬) হলেন একজন মিশরীয় ইসলামী চিন্তাবিদ এবং বিপ্লবী রাজনৈতিক সংগঠক। তিনি মিশরের ইসলামী আন্দোলনের প্রধান সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমিন দলের মুখপত্র ইখওয়ানুল মুসলিমিন'এর সম্পাদক ছিলেন। তাকে তৎকালীন সরকারের আদেশে ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করতে হয়।
তাফসীরে জালালাইনঃ
আল কুরআনুল কারিমের প্রসিদ্ধ ব্যখ্যা গ্রন্থসমুহের মধ্যে একটি অন্যতম সুপরিচিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ; যার অনন্য বৈশিষ্ট্যে পাঠক মহলে সমাদৃত।
এ গ্রন্থটি কারও একক রচনা নয়। দু'জন বিজ্ঞ মুফাসসির এটি রচনা করেছেন। তাদের দু'জনের নাম একই। দু'জনেরই নাম 'জালালুদ্দীন'। একজন জালালুদ্দিন মহল্লী। অপরজন জালালুদ্দিন সুয়ুতী। তাদের নামের প্রথম অংশ হল - 'জালাল'। আরবি ভাষায় 'জালাল' শব্দের দ্বিবচন হল 'জালালাইন'। যেহেতু এটি দুই 'জালাল'-এর লেখা, তাই দুই নামের সম্পৃক্ততায় তাকে তাফসির আল জালালাইন নামে একে অভিহিত করা হয়।গ্রন্থটির মূল ভাষা আরবি। পরবর্তীতে বহু ভাষায় এটি অনুবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উর্দু , ফার্সি, বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায়ও অনুবাদ রয়েছে।
তাফহীমুল কুরআনঃ
তাফহীমুল কুরআন হলো মুসলিম দার্শনিক ও স্কলার সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী রচিত কোরআনের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ (তাফসীর)। মাওলানা মওদুদী এ তাফসীর লেখার জন্যে ৩০ বছর সময় ব্যয় করেন। তিনি ১৯৪২ সালে উর্দু ভাষায় শুরু করেন এবং ১৯৭২ সালে এটি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা, মালয়ালাম, মারাঠি এবং পশতু সহ একাধিক ভাষায় এটি অনুবাদ করা হয়। তাফহীম আধুনিকতাবাদী সংবিধানের সমন্বয় এবং আধুনিক ইসলামী চিন্তাধারাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এটা বিভিন্ন উপায়ে ঐতিহ্যগত তাফসীর থেকে ভিন্ন। এটি কোর'আনের উপর একটি ঐতিহ্যবাহী ভাষ্যই নয় বরং এতে অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস এবং রাজনীতি সম্পর্কিত আলোচনা রয়েছে।
মাআরিফুল কুরআনঃ
মাআরিফুল কুরআন পাকিস্তানি ইসলামী পন্ডিত মুফতি মুহাম্মদ শফী (১৮৯৭–১৯৭৬) বিরচিত উর্দু ভাষায় ৮ খন্ডে সমাপ্ত কুরআনের একটি প্রামাণ্য ও নির্ভরযোগ্য তাফসির বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ। বাংলায় অনুবাদক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন খান। সৌদি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৪১৩ হিজরি মোতাবেক ১৯৯৫ সালে খাদেমুল হারামাইন শরীফাইন বাদশাহ ফাহাদ কোর'আন মুদ্রন প্রকল্প থেকে বাংলাভাষীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য মুদ্রিত হয়। সাম্প্রতিক সৌদি দাওয়াত ও ইরশাদে কর্মরত বাংলাদেশী কিছু স্কলারদের তৎপরতায় মুদ্রন ও বিতরণ নিষিদ্ধ।
তাফসীর আল-তাবারিঃ
যার প্রকৃত নাম জামিউল বয়ান আন তাবিলি আয়িল কুরআন। তাফসীর আল-তাবারি নামেই অধিক পরিচিত।ফারসি ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক মুহাম্মদ ইবনে জারির আল -তাবারির লেখা এই তাফসীর গ্রন্থ। মূল তাফসীরটি আরবি ভাষায় রচিত হলেও পরবর্তীতে ইংরেজি, বাংলা সহ অনেক ভাষায় অনুদিত হয়। প্রাচীন তাফসীরগুলোর মধ্যে তাফসীর আল-তাবারি অন্যতম। তাফসীরটি রচনায় হাদিসের প্রভাব উল্লেখযোগ্য হওয়ায় ইসলামিক স্কলার এবং ছাত্রদের কাছে এই তাফসীরটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তাফসীরে যাকারিয়াঃ
কুরআনুল কারীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর) – ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া।
সৌদি সরকারের ওয়াকফ, সর্বোপরি আমাদের বাংলা ভাষাভাষীদের সেবা প্রদানার্থে কিং ফাহাদ হোলি কমপ্লেক্স এই বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর উপস্থাপন করেছেন। এর অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর করেছেন ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া। আর কমপ্লেক্স-এর পক্ষে তা পূনপাঠ করেছেন, শাইখ কাউছার এরশাদ ও শাইখ মুহাম্মাদ ইলিয়াছ ইবনে সালেহ আহমাদ। এই অনুবাদটির কিছু বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, আল কুরআনের সহজ সরল অনুবাদের পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত তাফসীর ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রতিটি সূরার শুরুতে সূরার বৈশিষ্ট্য, শানে নূযুল ও সহীহ হাদীসের আলোকে ফযীলত এর বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। কুরআনের তাফসীরকে সহজবোধ্য করার জন্য টীকা প্রদান ও এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা সুন্নাহ থেকে সংকলিত। আল্লাহ সুবহানা ওয়া তাআলার সিফাত সম্পর্কিত আয়াতগুলোর অবিকৃত অনুবাদ ও তাফসীরের ক্ষেত্রে হাদীসকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এবং হাদীসগুলোর রেফারেন্সসহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিদ্যমান।
আসুন আমরা আমাদের সাধ্যমত কুরআনের ব্যাক্ষাসহ পড়ি এবং পাশাপাশি বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থ এবং ইসলামি সাহিত্য পাঠের অভ্যাস করি। ইনশাআল্লাহ শুনে শুনে বিভ্রান্ত হওয়া লাগবেনা। দ্বীনের সহী সমজ আল্লাহ আমাদের হৃদয়ে দৃঢ় করে দিবেন। "ওয়ামা তৌফিকী ইল্লা বিল্লাহ। "
About Md. Emran Hossen
info: https://cv.tushar.sbs
BANGLA TRANSLATION OF TAFSIR IBN KASIR [1 TO 18 PARTS]
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment